নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারের গল্প এখন থেকে বদলে যাবে — কারণ আগামী ১৫ আগস্ট থেকে এক ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি এই নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে, যা দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে।
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের হাতে রয়েছে গড়ে অনেক বেশি সিম, কেউ কেউ একেক নামে দশের বেশি সিম নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু এই সংখ্যার পেছনে রয়েছে একটি অজানা বাস্তবতা — অনেক সিম ব্যবহৃত হয় প্রতারণা, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ কাজে। এসব কারণে বিটিআরসি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এক গ্রাহকের নামে সিম সংখ্যা সীমাবদ্ধ করল।
২৬ লাখ গ্রাহকের ৬৭ লাখ সিম বন্ধ!
বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, নতুন এই সীমা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের হাতে থাকা ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম বন্ধ হয়ে যাবে। এটা একেবারেই বড় পরিমাণ! যাদের নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের একটি তালিকা অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে। অপারেটররা সেই গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং জিজ্ঞাসা করবে কোন ১০টি সিম তারা রাখতে চান।
কেন ১০টি সিম?
২০১৭ সালে বিটিআরসি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল, যা ২০২২ সালেও অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু সিম জালিয়াতি ও অপরাধের বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার সংখ্যা কমিয়ে আনা হলো ১০-এ। বিশেষ করে যেসব নম্বর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত—যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট—সেসব নম্বর অগ্রাধিকার পাবে।
বাংলাদেশের মোবাইল বাস্তবতা
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে সক্রিয় সিমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বিশাল ১৮ কোটি ৬২ লাখে। অথচ প্রকৃত গ্রাহক মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখের মতো। তার মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি গ্রাহকের নামে ৫টির কম সিম রয়েছে। তাই নতুন নিয়মের কারণে অধিকাংশ সাধারণ গ্রাহকের ওপর প্রভাব পড়বে না, মনে করছে বিটিআরসি।
নিয়ন্ত্রকের সতর্ক বার্তা
বিটিআরসি বলছে, সিম নিষ্ক্রিয় করার আগে গ্রাহকদের মতামত নেয়া হবে এবং ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা চালানো হবে। কারণ, যেসব সিম বন্ধ হবে তার মাধ্যমে সুরক্ষা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
অপরাধের সঙ্গেও লড়াই
আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়েছে, অধিক সিম থাকার সুযোগে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, ফোন ক্লোনিংসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের নাম ও নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব প্রতিরোধে নতুন সিম সীমা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সার্বিক প্রভাব
এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে দেশের মোবাইল ব্যবস্থাপনায় নতুন এক দিকচিহ্ন স্থাপন হবে। অপারেটরদের দায়িত্ব বেড়ে যাবে, গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। তবে, এটি নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সুবিন্যস্ত মোবাইল পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
১৫ আগস্ট থেকে মোবাইল সিমের সংখ্যা এক গ্রাহকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০টি। অতিরিক্ত সিম বন্ধ করার মাধ্যমে প্রতারণা ও অপরাধ কমানো হবে। গ্রাহকদের সুবিধা এবং সেবার স্বচ্ছতার জন্য বিটিআরসি-র এই উদ্যোগে প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার যুগে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগের সূচনা হবে।
মো: কামাল/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
১৫ আগস্ট থেকে এক গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম
- আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১১:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১১:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ